নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কারণে মিয়ানমারের ইউনিয়ন নির্বাচন কমিশন (ইউইসি) উত্তর রাখাইন রাজ্যে ভোটগ্রহণ বাতিল করেছে। সংঘাত-বিধ্বস্ত রাখাইন রাজ্যের অধিকাংশ ভোটার এবার ভোট দিতে পারছেন না। মিয়ানমারের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারি ও নিরাপত্তা ব্যবস্হা জোরদার করা হয়েছে বলে জানা যায়।
অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে মিয়ানমারের ইউনিয়ন নির্বাচন কমিশন বা ইউইসি দেশব্যাপী ৫৭ টি জনপদের সম্পূর্ণ বা অাংশিক ভোটগ্রহণ বাতিল করে। তন্মধ্যে রাখাইন রাজ্যে ৯ টি টাউনশিপ বা জনপদ রয়েছে। রাজ্যের রাজধানী সিট্টউয়ের আংশিকসহ দক্ষিণাঞ্চলের ৭ টি টাউনশিপে ইউনিয়ন ও রাজ্য সংসদের ২৭ টি আসনে ভোটগ্রহণ করা হবে।
দেশটির সংবিধান অনুযায়ী রাখাইন প্রাদেশিক সংসদে সেনাবাহিনীর জন্য সংরক্ষিত ২৫ শতাংশ আসন বাদে ৩৩ টি আসন রয়েছে। ফলে আগামী ৮ ই নভেম্বরের নির্বাচনে রাজ্যের সংসদীয় আসনের মাত্র ৪৪ শতাংশ পূরণ করা সম্ভব হবে বলে জানা গেছে।২০২০ সালের সাধারণ নির্বাচনে রাখাইন রাজ্য ১৬ লক্ষ ভোটার রয়েছে। রাজ্যের ৪২ টি আসনের মধ্যে মাত্র ১৪ টি সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে।
ভোটগ্রহণ বাতিলের কারণে অর্ধেকেরও কম আসন পূরণের ফলে রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বকে চ্যালেঞ্জ করে।এতে “সংসদ কীভাবে চলবে?” তা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের জিজ্ঞাসা। তাদের মতে, যাতে জনগণের পক্ষে রাজনৈতিক সমাধানের চেয়ে সশস্ত্র আধিপত্যের স্থানকে আরও প্রশস্ত করবে।
রাখাইনের তাইউং-এ তিন এনএলডি প্রার্থী ১৪ অক্টোবর থেকে সশস্ত্র বিদ্রোহী আরাকান আর্মি (এএ) এর হেফাজতে রয়েছে।
উল্লেখ্য,২০১৫ সালের নির্বাচনের পর থেকে রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলর অং সান সুচির এনএলডি-র জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে এবং রাখাইন রাজ্য জুড়ে দলটির অবস্থা সুবিধাজনক নয় বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
রাখাইনের এএলডি চেয়ারম্যান ইউ কিউ মাইন্টও ইউইসির সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, পাউকতাউতে কোনও সংঘাত হচ্ছে না, অথচ সেখানে ভোটগ্রহণ বাতিল হয়েছে। তিনি সরকারের এই উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্ন তোলেন, ” ক্ষমতাসীন এনএলডির যে আসন০০০গুলিতে বিজয়ী হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। ইউইসি ক্ষমতাসীন দলের পক্ষাবলম্বন করে সেসব আসনের ভোটগ্রহণ বাতিল করেছেন”।
আপার হাউসের আইন প্রণেতা ড হাটোট মে বলেছেন, ২০১০ ও ২০১৫ উভয় সাধারণ নির্বাচনে ভোটাররা জাতিগত-রাখাইন দলগুলিকে সমর্থন করেছিলেন, তবে ২০০৮ সালের সংবিধানে তাদের রাজ্য সরকার গঠনের অনুমতি দেওয়ার জন্য সংশোধন করা হয়নি। এখন নয়টি জনপদে তাদের উদ্বেগ জানাতে কোনও প্রতিনিধি থাকবে না। তিনি বলেন ” সংসদে যত দুর্বল রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব, তত বেশি সশস্ত্র সংঘাত।”
২০১৯ সাল থেকে চলমান সশস্ত্র সহিংসতায় প্রায় ২০০,০০০ এরও বেশি বাস্তুচ্যুত ও শতাধিক হতাহত ও গ্রেপ্তার হয়েছে। সরকার মার্চে এএ কে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসাবে ঘোষণা করেছে। অক্টোবর অবধি উত্তর রাখাইনের কিউকতাউ, মিনব্যা, পোনাগনিউন, রাথেদাং, বুথিডাং এবং আন টাউনশিপগুলিতে ঘন ঘন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে চলেছে।
“নির্বাচনের পরে লড়াই আরও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলে জানিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইউ মং মং সো। তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষর না হওয়া পর্যন্ত উত্তর রাখাইন রাজ্যে কোনও ভোটগ্রহণ সম্ভব নয়, মানুষের আগ্রহ সশস্ত্র সংঘাতের দিকে ঝুঁকতে পারে।
মিয়ানমারের জাতীয় ও রাখাইন রাজ্য প্রাদেশিক সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সীমান্তজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার খবর পাওয়া গেছে। যদিও বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন উত্তর রাখাইনের সব ক’টি জাতীয় ও প্রাদেশিক আসনের ভোট গ্রহণ বাতিল করেছে মিয়ানমার ইউনিয়ন নির্বাচন কমিশন।
কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি’র অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল আলী হায়দার আজাদ আহমেদ বলেন, মিয়ানমারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে কোন ধরনের সহিংসতা ও বেআইনি অনুপ্রবেশ প্রতিরোধে সীমান্তজুড়ে টহল,তল্লাশি ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা অধিকহারে জোরদার করা হয়েছে।