উখিয়ার কোটবাজার এলাকায় ইয়াবা সংশ্লিষ্টতা ও অস্বাভাবিক সম্পদের মালিক বনে যাওয়া পল্লী চিকিৎসক জামাল উদ্দিনকে নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাকে তলব করেছে। প্রেরিত নোটিশে ২৯ অক্টোবর চট্টগ্রামস্থ দুদক কার্যালয়ে স্বশরীরে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। এ সময় তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব, আয়ের উৎস সংক্রান্ত কাগজ, ব্যাংক হিসেব, জাতীয় পরিচয়, চেয়ারম্যান সনদ, জন্ম নিবন্ধন সহ অন্যান প্রয়োজনীয় কাজপত্র নিয়ে যেতে বলা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় চৌকিদার আব্দু শুক্কুর।
তিনি জানান, উখিয়া থানা উপ-পরিদর্শক বিকাশ আমার সাথে যোগাযোগ করে পল্লী চিকিৎসক জামালকে নোটিশের বিষয়ে অবগত করার জন্য নিয়ে যান।
এ বিষয়ে জানতে উখিয়া থানার উপ-পরিদর্শক বিকাশের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার কাছে দুজনের নোটিশ এসেছে তৎমধ্যে কোর্টবাজারের জামাল মেডিসিন হাউসের মালিক পল্লী চিকিৎসক জামালের নাম রয়েছে। আমি ইতিমধ্যে তাকে নোটিশের বিষয়ে অবগত করেছি।
সম্প্রতি এক অডিও বার্তায় মুখোশধারী ইয়াবাকারবারী হিসেবে পল্লী চিকিৎসক জামালের নাম বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে টনক নড়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের। যার প্রেক্ষিতে তার স্থাবর-অস্থাবর অঢেল সম্পদের হিসাব চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাকে তলব করেন। কিন্তু পল্লী চিকিৎসক জামালের এসব অস্বাভাবিক সম্পদের বিষয়ে বস্তনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ হলে জামাল সাইবার ট্রাইব্যুনাল (বাংলাদেশ), ঢাকায় ৪ সাংবাদিককে আসামী করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৫/২৯ ধারায় একটি অভিযোগ দায়ের করে। কিন্তু দায়েরকৃত অভিযোগটি পিটিশন মামলা হিসাবে নিবন্ধন করার পর পর্যাপ্ত তথ্য উপাত্ত না পাওয়ায় পরবর্তিতে মামলাটি খারিজ করে দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত।
উল্লেখ্য, রত্নাপালং তেলীপাড়া গ্রামের নাছু মিয়ার ছেলে জামাল উদ্দিন (৩৮) দীর্ঘ চার বছরের অধিক কোটবাজারের ছাবের মেডিসিন হাউসে চাকরি করেন। এরপরে ২০০১ সালের দিকে নিজে একটি ফার্মেসী ব্যবসা চালিয়ে আসলেও বর্তমানে নামে-বেনামে শত কোটি টাকার সহায় সম্পদের মালিক বনে যায়।
সূত্রে আরো জানা গেছে, কয়েক বছর পূর্বে পল্লী চিকিৎসক জামাল উদ্দিন তার মামা একই এলাকার বাসিন্দা আব্দু শুক্কুরের পুত্র শাহ আলম সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ১১-৩০৬ নাম্বারের একটি ট্রাকের মালিক হয়। প্রথমদিকে ওই ট্রাকে জোগান তৈরি করে নিয়মিত ইয়াবার চালান নিয়ে যেত। গাড়ীটি একাধিকবার আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ইয়াবাসহ আটকের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার আগে ট্রাকটি বিক্রি করে দেয় এবং ইয়াবা কারবারের কৌশল পরির্বতন করে।
সম্প্রতি রত্নাপালং ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ইয়াবাকারবারী ও অস্বাভাবিক সম্পদের মালিক বনে যাওয়া ১৩ জনের তালিকায় তার নাম একাধিক তদন্তে উঠে আসে বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য ও ফার্মেসী ব্যবসায়ী সেলিম উদ্দিন।
এর আগে এক অডিও বার্তায় টেকনাফের হ্নীলা থেকে ঔষধের কার্টুনভর্তি ইয়াবার চালানের তথ্যও উঠে আসে। তবে ফার্মেসী ব্যবসা ও চিকিৎসা সেবার নেপথ্যে ইয়াবা কারবারের বিষয়টি আগে থেকে লোকমূখে চাওর হলেও কেউ ভয়ে মুখ খুলেনি। কারণ সে অবৈধ টাকায় ম্যানেজ করে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় থেকে তার ইয়াবা সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, পল্লী চিকিৎসক জামাল উদ্দিন তেলীপাড়ার জাফর উল্লাহ চৌধুরীর ছেলে জসিম উদ্দিন চৌধুরী কাছ থেকে ২০ শতক, রুহুল্লারডেবা সংলগ্ন তার আপন চাচা নাজু মিয়ার কাছ থেকে ১০ শতক, আকবর আহমদ চৌধুরীর কাছ থেকে ৪০ শতক, তেলীপাড়ার মৃত ফকির আহমদ খলিবার ছেলে শফিউল আলমের কাছ থেকে ২০ শতক, ঝাউতলা সড়ক সংলগ্ন কামাল উদ্দিনের কাছ থেকে ৮০ লক্ষ টাকায় ২০ শতক, পুরাতন ইউনিয়ন পরিষদের পাশে মৃত শমশের আলম চৌধুরীর ছেলে আসহাব উদ্দিন চৌধুরী দুলাল ও সাইফুল্লাহ চৌধুরীর কাছ থেকে ১ একর, কোর্টবাজারের পশ্চিম পাশে বৌদ্ধ বিহার সংলগ্ন মধু সুধন বড়ুয়া মেম্বারের কাছ থেকে ২ কোটি ৩২ লক্ষ টাকায় ৬০ শতক, ভালুকিয়া রোড় সংলগ্ন ২০ শতক, পালং স্কুলের পাশে মৃত মির কাশেম চৌধুরীর ছেলে মাস্টার মোজাফ্ফর আহমদ চৌধুরীর কাছ থেকে ১২০ শতক, হলদিয়ার পাগলির বিল রোড়ে আমিন মেম্বারের পাশে ৪০ শতক, উত্তর বড়বিল শশুর বাড়ি সংলগ্ন ৪ একর, রামুতে ১শ একরের বেশি রাবার বাগান, জালিয়াপালং ফুফুর বাড়ি সংলগ্ন ৪০ শতক, লিংক রোড় আল বয়ানের পাশে ১০শতক এবং কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের সামনে ও গোল দীঘির পাড়ে জায়গার মালিক বনে যায়। রত্নাপালং তেলীপাড়া এলাকায় ৪টি দোকানসহ বসত ঘর। কোর্টবাজার ডিজিটাল ল্যাবের অন্যতম অংশীদার সে।
এছাড়াও কোটবাজার স্টেশনে ৩টি ফার্মেসী (যথাক্রমে জামাল ফার্মেসী, দুলাল ফার্মেসী, মরিয়ম ফার্মেসী) ও দুটি গোডাউনের অগ্রীম জামানতসহ মূলধন প্রায় আড়াই কোটি টাকা। হাজী নাছু মিয়া হার্ডওয়্যারের ৬ টি গোডাউনসহ অগ্রীম জামানত ও মূলধন ৫ কোটি টাকার বেশি বলে ধারণা করছেন কোটবাজারের ব্যবসায়ীমহল।
শুধু তাই নয় এ ফার্মেসী ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন হয়েছে ৫টি গাড়ির মালিক। তৎমধ্যে কার গাড়ী নাম্বার- চট্টমেট্রো ১২৮৩২৬, নোহা গাড়ী নাম্বার- চট্টমেট্রো ১১৭১৪৫, মাইক্রো হাইয়েচ গাড়ী নাম্বার- চট্টমেট্রো ১১৪৭৩৭, অন্য দুটি গাড়ি আছে টেকনাফে চলাচল করে বলে খবর পাওয়া গেছে।
ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকে রয়েছে নামে বেনামে লক্ষ লক্ষ টাকার ডিপিএস। এছাড়াও রয়েছে তার কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত ঘরসহ স্থাবর-অস্থাবর বিপুল সম্পদ।
সুত্রঃ ডিবিডিনিউজ২৪।