রোহিঙ্গারা আশ্রয় নেয়ার পর অবস্থান যতটা নিরব ছিল, এখন তেমনটি নেই। আগে তাদের চাহিদা ছিল খাদ্য এবং চিকিৎসার ওপর। এখন ফ্রি রেশনের খাবার খেয়ে আলস্যতার কারণে তাদের মাথায় দুষ্টুবুদ্ধি কাজ করছে প্রতিনিয়ত। তাছাড়া ক্যাম্পগুলোতে অর্ধেকেরও বেশি যুবক। ফলে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে বলেও মনে করছেন স্থানীয়রা।
এবার সেই রোহিঙ্গারা কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। আগে তারা মরণনেশা ইয়াবা বহন করতো। এখন নিজেরাই ইয়াবা ব্যবসা করে কোটিপতি হওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত। এই কাজ করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ইয়াবাসহ আটক ও ‘বন্দুকযুদ্ধে’ প্রাণ হারাচ্ছে অনেকে।
সূত্র জানিয়েছেন, মিয়ানমার থেকে ইয়াবা এনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে দিচ্ছে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষরা। পুলিশের তালিকায় ইয়াবা কারবারিদের মধ্যে রোহিঙ্গাদের নাম রয়েছে।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব-১৫) সূত্র জানিয়েছে, গত ৬ মাসে ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে ১০ লাখ ৮৩ হাজার ৭১৯ পিস। গ্রেফতার হয়েছে ১৮৭ জন আর র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন ১০ জন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তারা বলেছেন, মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা আসার পর থেকেই মেথাফেটামাইন ও ক্যাফেইনের মিশ্রণে তৈরি উত্তেজক বড়ি ইয়াবার পাচার বেড়ে গেছে। যে কারণে ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত অনেক বেশি ইয়াবার চালান ও পাচারকারী ধরা পড়েছে। গত ৬ জুলাই দিবাগত রাতে টেকনাফের হ্নীলার ওয়াব্রাং গ্রামের নাফ নদের তীর সাঁতরিয়ে ইয়াবা নিয়ে অনুপ্রবেশকালে বিজিবির সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুই রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। এ সময় উদ্ধার করা হয়েছে ৫০ হাজার পিস ইয়াবা, একটি চায়না পিস্তল ও দুই রাউন্ড কার্তুজ। টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে, কর্ণেল ফায়সাল হাসান খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিহতরা হলেন উখিয়ার কুতুপালং ৫ নম্বর ক্যাম্পের জি ২/ই ব্লকের মোহাম্মদ শফির ছেলে মোহাম্মদ আলম (২৬) ও বালুখালী ২ নম্বর ক্যাম্পের কে-৩ ব্লকের মোহাম্মদ এরশাদ আলীর ছেলে মোহাম্মদ ইয়াছিন (২৪)।
কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন (৩৪ বিজিবি) সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারি থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত চোরাচালান ও মাদকবিরোধী অভিযানে ৩ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৯১০ টাকা মূল্যের ১১ লাখ ৪১ হাজার ২৯৭ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে ৮৯ জন আসামি আটক করা হয়। এছাড়াও বিজিবির সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৯ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। তাদের সর্বশেষ অপারেশন গত ৯ জুলাই ভোর ৪টার দিকে উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের তুলাতলী জলিলের ঘোনা ব্রিজের পাশে বিজিবির সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তিন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। তারা ইয়াবা কারবারি বলে দাবি করেছে বিজিবি। এ সময় তিন লাখ পিস ইয়াবা, দুটি দেশীয় পাইপগান ও পাঁচ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে।
টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ জানিয়েছেন, টেকনাফে পুলিশের সঙ্গে ‘গোলাগুলি’তে দুই মাদক কারবারি নিহত হয়েছেন। ৭ জুলাই ভোরে টেকনাফ হোয়াইক্যং ইউনিয়নের পশ্চিম মহেশখালীয়া পাড়ার কম্বনিয়া এলাকায় এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র, গুলি ও ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
চলতি বছরের জুন মাস থেকে রোববার (১৯ জুলাই) পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৬০ জন নিহত হয়েছে বলে জানা যায়। তাদের মধ্যে ২৬ জন সক্রিয় ডাকাত ছিল বলে দাবি করা হয়েছে। বাকিরা রোহিঙ্গা মাদক কারবারি।
কক্সবাজারস্থ র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ দমনে র্যাবের প্রতিনিয়ত অভিযান চলছে। পাশাপাশি মাদক পাচারে জড়িত বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। র্যাবের সঙ্গে গুলি বিনিময়ের ঘটনাও ঘটেছে। টহল জোরদার করেছে র্যাব।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মর্জিনা আক্তার মর্জু বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। নিয়মিত টহল ও অভিযান জোরদার করেছে পুলিশ। কঠোর অবস্থান ও নজরদারিতে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সুত্রঃ কক্সবাজার ভিশন ডটকম।