কক্সবাজারের উখিয়া জহির হত্যাকান্ডের মূলহোতা কে এই রায়হান? কেননা, কোমল পানীয়ের সাথে ব্যাটারীর পানিয়ে মিশিয়ে খাইয়ে জহির হত্যাকান্ডের ঘটনার অন্যতম রায়হানের অস্ত্রসহ ছবি সর্বত্রে প্রকাশিত হয়। এ ঘটনায় গত ১৮ জুন রাত ১১ টার দিকে মো: রায়হান র্যাব-১৫ এর হাতে আটক হলেও অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ায় সাধারণ মানুষ মনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কে এই রায়হান ? তার ক্ষমতার উৎস কোথায়?
জহির হত্যাকান্ডের পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অস্ত্রসহ রায়হানের ছবি ভাইরাল হতে দেখে গেছে। জহিরের মৃত্যুর ৩ দিন পর র্যাব-১৫ তাকে আটক করে। এ ঘটনায় তাকে প্রধান আসামী করে উখিয়া থানার মামলা নং ১৫, ধারা- ৩০২/৩৪ দ:বি: রুজু হলে অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ায় গণমানুষের মাঝে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়।
তাদের একজন উখিয়া উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল হোছাইন আবু গত ২০ জুন তার ব্যক্তিগত ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, বহু অপকর্মের হোতা, পালং গার্ডেনের নৈশ প্রহরী জহির আহমদ হত্যাকান্ডের অন্যতম প্রধান আসামী হিজলিয়ার বিতর্কিত ও ক্ষমতাশালী ব্যক্তির ছত্রছায়ায় আশ্রিত নবী সুলতানের পুত্র গ্রেপ্তারকৃত রায়হানের কাছ থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবী জানাচ্ছেন স্বজন হারানো পরিবার ও সচেতন উখিয়াবাসী।
এদিকে ছেলে মো: রায়হান সস্পর্কে পিতা নবী সুলতানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, তার ছেলে স্থানীয় একটি মহলের চক্রান্তের শিকার হয়েছে। ইয়াবা কারকারি আব্দু রশিদ, এমরান, আবুল আলা মিলে তার ছেলেকে হত্যাকান্ডে ফাসিয়ে দিয়েছে বলে তিনি দাবী করেন।
এ সময় তিনি আরো বলেন, রায়হান চট্টগ্রামস্থ এমইএস কলেজে মার্কেটিং বিষয়ে বিবিএ পড়ছে। একই সাথে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটিতে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ছে। সে এইচএসসিতে অধ্যয়নকালে বিজ্ঞান কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতি করত। সম্প্রতি করোনার কারণে সে বাড়িতে আসে বলে নবী জানায়।
ছেলের হাতে অস্ত্রের ছবির বিষয়ে নবী সুলতান বলেন, এটি ছিল একটি খেলনার অস্ত্র। যা বিদেশ থেকে আনা হয়েছিল। এ সময় তিনি জহির হত্যাকান্ডে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তিও দাবী করেন।
এলাকাবাসী ও বিশ্বস্থসূত্রে জানা গেছে, রায়হান নিজেকে কখনো ছাত্র, কখনো পুলিশের ইনফরমার, কখনো সাংবাদিক পরিচয় দিলেও তার সাথে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তাদের দহরম-মহরম সম্পর্ক ছিল। এছাড়াও সরকার দল এবং বিরোধী দলের প্রভাবশালী নেতাদের সাথে রয়েছে ঘনিষ্ট সম্পর্ক। যার ফলে এলাকায় যে কোন অপরাধ ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে কখনো চিন্তা করেনি রায়হান।
সূত্রে আরো জানা গেছে, রায়হান চট্টগ্রামের প্রভাবশালী এক রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় বাঁশখালী থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক অস্ত্র ব্যবসার করে আসছিল। এছাড়াও কিছুদিন পূর্বে তার এক চাচা গিয়াস উদ্দিন ইয়াবার চালান নিয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সাথে বন্ধুক যুদ্ধে নিহত হয়। চাচা নিহতের দিন রায়হান রাতারাতি চট্টগ্রাম পালিয়ে যায় এবং তার ব্যবহৃত মোবাইল (01845218048) নম্বরটি একেবারে বন্ধ করে দেয়। ওই সীমটি পুন: উদ্ধার পূর্বক সংম্লিষ্ট প্রশাসন করলে তদন্ত করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে বলে সূত্র নিশ্চিত করে।
এদিকে সম্প্রতি উখিয়ায় করোনাকালীন রেডজোনে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংবাদ সংগ্রহের জন্য ইউএনও’র স্বাক্ষরিত কার্ড ইস্যূ নিয়েও চলছে নানান সমালোচনা। কারণ সে প্রেস ক্লাবের সদস্য বা সক্রিয় কোন সংবাদকর্মী না হয়ে কিভাবে কার্ড পেল এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিরূপ মন্তব্য করতে দেখা যায় অনেককে।
ওই কার্ড ইস্যু প্রসঙ্গে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সাংবাদিক নেতাদের সুপারিশে তার নামে কার্ডটি ইস্যু করা হয়েছিল। তবে রায়হান আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পরপরই তার কার্ডটি অফিসিয়ালি বাতিল করা হয় বলে তিনি জানান।
অপরদিকে রায়হানের অস্ত্রসহ ছবির বিষয়ে কথা বলতে উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মর্জিনা আকতারের সাথে যোগাযোগ করা হলে ফোন রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, রায়হানের অস্ত্রসহ ছবিটি দেখে একটি অত্যাধুনিক ভারতের তৈরি আধুনিক অস্ত্র মনে হয়েছে।
জানতে চাইলে র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক আজিম আহমেদ রায়হান বলেন, ছবির অস্ত্র দেখে জহির হত্যাকান্ডের মূলহোতা রায়হানের কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়। তবে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে এটি খেলনার অস্ত্র বলে জানায় রায়হান। এ সময় জহির হত্যাকান্ডে অপর দুই আসামীকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান র্যাব-১৫ অধিনায়ক।
উল্লেখ্য, গত ৩ জুন রত্নপালং ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের পালং গার্ডেন এলাকায় কোমল পানীয়ের সাথে ব্যাটারীর পানি মিশিয়ে জহির আহমদকে খাইয়ে দেন রায়হানসহ আরো দুই জন। এ ঘটনার ১২ দিন পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে জহির।