ফলে চেয়ারম্যানের মৃত্যু, অপসারণ, অসুস্থতা, পদত্যাগ বা বিদেশ ভ্রমণের সময় সেবাবঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এ বিষয়টি দেখভালের দায়িত্বে থাকা জেলা পর্যায়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালকরাও (ডিডিএলজি) এর কোনো খোঁজখবর রাখেন না। অনুসন্ধানে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতিতে ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে তৃণমূলের ৮০ জনের মতো জনপ্রতিনিধিকে বরখাস্ত করার পর বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। সম্প্রতি স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব (ইউনিয়ন শাখা) মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী ৪৮ জেলার ডিডিএলজিকে চিঠি দিয়ে সব ইউনিয়ন পরিষদে আইন অনুযায়ী ‘প্যানেল চেয়ারম্যান’ নির্বাচিত করে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার নির্দেশনা দেন। জানতে চাইলে মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইন অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ গঠনের পর প্রথম সভার ৩০ দিনের মধ্যেই প্যানেল চেয়ারম্যান করতে হবে। যদি না করে তাহলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তা বিধিমতে করে দিতে পারে। কিন্তু অনেক জায়গায় প্যানেল চেয়ারম্যান নেই। বিভিন্ন জায়গা থেকে আমরা এ ধরনের অভিযোগ পেয়ে সারা দেশে ডিডিএলজিকে চিঠি পাঠিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। ’স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯-এর ৩৩ (১) ধারায় বলা আছে, ‘পরিষদ গঠিত হইবার পর প্রথম অনুষ্ঠিত সভার ৩০ (ত্রিশ) কার্যদিবসের মধ্যে অগ্রাধিকারক্রমে ৩ (তিন) সদস্যবিশিষ্ট একটি চেয়ারম্যানের প্যানেল, সদস্যগণ তাহাদের নিজেদের মধ্য হইতে নিবার্চন করিবেন।
’ ৩৩ (২)-এ বলা আছে, ‘অনুপস্থিতি, অসুস্থতাহেতু বা অন্য যেকোনো কারণে চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে তিনি পুনরায় স্বীয় দায়িত্ব পালনে সমর্থ না হওয়া পর্যন্ত চেয়ারম্যানের প্যানেল হইতে অগ্রাধিকারক্রমে একজন সদস্য চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করিবেন। ’ আর ৩৩ (৩)-এ বলা আছে, ‘পদত্যাগ, অপসারণ, মৃত্যুজনিত অথবা অন্য যেকোনো কারণে চেয়ারম্যানের পদ শূন্য হইলে নির্বাচিত নতুন চেয়ারম্যান কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত চেয়ারম্যানের প্যানেল হইতে অগ্রাধিকারক্রমে একজন সদস্য চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করিবেন। ’স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ‘প্যানেল চেয়ারম্যান’ নির্বাচন না করার অন্যতম কারণ হলো নির্বাচিত চেয়ারম্যানরা নিজেদের ‘একচেটিয়া ক্ষমতা’ টিকিয়ে রাখতে চান। এ জন্য অন্য কাউকে ‘প্যানেল চেয়ারম্যান’ হিসেবে বসাতে চান না তারা। অনেক চেয়ারম্যান আবার কৌশলে একজন ইউপি সদস্যকে তার অনুপস্থিতিতে মৌখিকভাবে দায়িত্ব দিয়ে থাকেন। কিন্তু আইনে এ ধরনের কোনো সুযোগ নেই। এই মুহূর্তে একশোর অধিক ইউনিয়নে ‘প্যানেল চেয়ারম্যান’ নেই বলে মন্ত্রণালয় জানতে পেরেছে। এ বিষয়ে ডিডিএলজিকে বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নরসিংদী জেলায় ৭১টি ইউনিয়ন রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের সদস্যরা জানান, সেখানে চেয়ারম্যানরা কাউকে ‘প্যানেল চেয়ারম্যান’ করেননি। ইউনিয়ন পরিষদের সার্বিক বিষয়ে মূলত দেখভাল করে থাকে ডিডিএলজির দপ্তর। অথচ সেখানকার এ দপ্তরের প্রধানই জানেন না কটি ইউনিয়নে ‘প্যানেল চেয়ারম্যান’ নেই।
নরসিংদীর ডিডিএলজি (সিনিয়র সহকারী সচিব) কাউসার আজিজ গতকাল মঙ্গলবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইন অনুযায়ী তো সব ইউনিয়ন পরিষদে প্যানেল চেয়ারম্যান থাকার কথা। কিন্তু কোথায় আছে আর কোথায় নেই, তা বলতে পারছি না। ’
সুত্র: দেশরূপান্তর :