মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৭ সালের আগস্টের পর থেকে এদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের অনেকে প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত নোয়াখালীর ভাসানচরে যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। গত কয়েক দিনে অন্তত ৬০০ পরিবারের প্রায় ৩ হাজার রোহিঙ্গা ভাসানচরে যাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। যাদের অনেকে ইতিমধ্যে ভাসানচরের উদ্দেশ্যে ক্যাম্প ছেড়েছে। বিভিন্ন তথ্য সুত্রে এসব কথা জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ‘ভাসানচরে যেতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের প্রাথমিক তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। গত সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া তালিকা তৈরির কাজ চলছে। রোহিঙ্গারা যে স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যাওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছে, সেটা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত ভালো দিক। পর্যায়ক্রমে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে পাঠানো হবে । উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে তালিকা তৈরির কাজ চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ভাসানচরে যাওয়ার ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে রোহিঙ্গাদের মধ্যে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। এটি ভালো লক্ষণ। রোহিঙ্গা শিবিরে নেতাদের (মাঝি) মাধ্যমে সব কাজ হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের একটি করে আবেদনপত্র দেওয়া হয়েছে। যার ওপর লেখা আছে, “ভাসানচরে স্থানান্তরে আগ্রহী বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের তালিকা”।’
ভাসানচরের ছবি
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, এ সপ্তাহের মাঝামাঝি ভাসানচরে যেতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের একটি তালিকা শরণার্থী, প্রত্যাবাসন ও ত্রাণ কমিশনারের কার্যালয় থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
এর আগে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর কার্যক্রম ঘিরে বঙ্গোপসাগরের এ দ্বীপ ঘুরে আসেন ২২টি এনজিও প্রতিনিধি দল।
প্রতিনিধি দলের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় তিন হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ভূমি থেকে চার ফুট উঁচু করে নির্মাণ করা হয়েছে শেল্টার হোম। রোহিঙ্গাদের জন্য তৈরি এই অস্থায়ী আবাসস্থল এখন শহরে পরিণত হয়েছে।
সমাজ কল্যাণ উন্নয়ন সংস্থা’র চেয়ারপার্সন জেসমিন প্রেমা জানান, শুধুমাত্র আগ্রহী রোহিঙ্গাদের ভাসানচর নেওয়ার কাজ করছে সরকার এবং ২২টি উন্নয়ন সংস্থা। তাদের স্থানান্তরের জন্য অর্গানাইজড হয়ে কাজ করছে সরকার। এসব রোহিঙ্গাদের জাহাজে উঠার পূর্বে বিভিন্ন ডাটা এন্ট্রি সাপেক্ষে বরাদ্ধকৃত আশ্রায়ণের টোকেন ও চাবি হস্তান্তর করা হবে তিনি জানান।
তিনি জানান, দ্বীপটি বাসস্থানের উপযোগী করা, অবকাঠামো উন্নয়ন, বনায়ন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে দায়িত্বে রয়েছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনী।
সেখানে রোহিঙ্গাদের জন্য আধুনিক বাসস্থান ছাড়াও বেসামরিক প্রশাসনের ও আবাসিক ভবন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় ভবন, হাসপাতাল, ক্লিনিক ও খেলার মাঠ গড়ে তোলা হয়েছে।
ভাসানচরের ছবি
অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য সেখানে মহিষ, ভেড়া, হাঁস, কবুতর পালন করা হচ্ছে। আবাদ করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি। পরীক্ষামূলকভাবে ধান চাষও করা হচ্ছে।
প্রকল্পটিতে যেন এক লাখ এক হাজার ৩৬০ জন শরণার্থী বসবাস করতে পারেন সে লক্ষ্যে গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ করা হয়েছে। ১২০টি গুচ্ছগ্রামে ঘরের সংখ্যা এক হাজার ৪৪০টি।
রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবায় দুটি ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল এবং চারটি কমিউনিটি ক্লিনিক তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট পরবর্তী মিয়ানমারে নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়ে এদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয় ১০লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়।