অফিস স্টাফ সাজিয়ে ভূয়া প্রত্যয়নপত্রের মাধ্যমে জালিয়াতি করে লোন পাইয়ে দিয়ে ফেঁসে গেছেন বান্দরবান জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক মঞ্জুর আহমেদ। ঘটনা ধামাচাপা দিতে জালিয়াতি তথ্য ফাঁস করায় উল্টো স্থানীয় এক সাংবাদিককে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে মঞ্জুর আহমেদ। এতে ক্লান্ত হননি তিনি। সংবাদ প্রকাশ বন্ধ করতে উক্ত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, মঞ্জুর আহমেদের সহধর্মিণীর এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় রুবি প্রু মারমা নামে এক মহিলাকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যুরো বাংলাদেশ থেকে লোন পাইয়ে দিতে গত ৯ জানুয়ারী এক প্রত্যয়ন প্রদান করেন তিনি। এতে উল্লেখ করা হয় জনাব রুবী প্রু মার্মা স্বামী সুই থুই মং মার্মা মাতা ম্রানু প্রু মার্মা (মৃত) সাং মধ্যম পাড়া ৫নং ওয়ার্ড বান্দরবান পৌরসভা উপজেলা বান্দরবান সদর বান্দরবান পার্বত্য জেলা। তিনি অত্র কার্যালয়ের ডিস্ট্রিক্ট প্রোগ্রাম অর্গানাইজার (ডিপিও) হিসেবে অদ্যাবধি কর্মরত আছেন। এ প্রত্যয়ন দিয়ে রুবি প্রু মার্মা ব্যুরো বাংলাদেশ বান্দরবান শাখা হতে তিন লক্ষ টাকা ঋন নেয়। পরে খোজ নিয়ে জানা যায় রুবী প্রু মার্মা নামে কোন মহিলা বান্দরবান জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো কার্যালয়ে কর্মরত নেই।
বিষয়টি নিয়ে বান্দরবান জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক মঞ্জুর আহমেদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন রুবি প্রু মার্মা আমাদের এখানে ডিস্ট্রিক্ট প্রোগ্রাম অর্গানাইজার হিসেবে চাকরীর জন্য আবেদন করেছে। তার আবেদন আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি করোনার কারনে সেটি স্থগিত হয়ে আছে। কিন্তু তিনি গ্যারান্টি দিয়ে বলেন রুবি প্রু মার্মা নাকি চাকরী হয়ে যাবে। প্রত্যয়ন দেয়ার বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি (মঞ্জুর) বলেন, এরকম কোন প্রত্যয়ন দেয়া হয়নি, তবে দেখলে বলতে পারব না দেখে বলতে পারব না। হয়ত নাম ভাঙ্গিয়েও করলে করতেও পারে অনেকে। আমার সীলটা মেরে দিল কিন্তু দেখা গেল সাইনটা আমার না।
তবে এ প্রত্যয়ন জমা দিয়ে ঋণ নেয়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যুরো বাংলাদেশ বান্দরবান শাখার ম্যানেজার জাহেদ আজাদ সাংবাদিকদের জানান, রুবি প্রু মার্মা আমাদের একজন ঋন গ্রহীতা সে বান্দরবান জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর ডিস্ট্রিক্ট প্রোগ্রাম অর্গানাইজার হিসেবে কর্মরত আছে এমন প্রত্যয়ন দিয়ে ঋণ নিয়েছে এবং উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক মঞ্জুর আহমেদ এই প্রত্যয়নপত্রটি দিয়েছে। প্রত্যয়ন দেয়ার পর আমাদের অফিসের লোক স্বশরীরে জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো বান্দরবান কার্যালয়ে গিয়ে যাচাই করেছি, তারপর ঋন দেয়া হয়েছে।
এদিকে প্রত্যয়ন পত্রটি জাল প্রমানিত হওয়ার পরও সহকারী পরিচালক জাল স্বাক্ষরকারী ও জাল সনদে ঋণ প্রদানকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ দায়ের না করে নিজের কুকর্ম ঢাকতে সংবাদ প্রকাশে বাধা সৃষ্টি করার লক্ষে উল্টো তথ্য প্রদানকারী সাংবাদিকের বিরুদ্ধে থানায় জিডি দায়ের করেন।
এবিষয়ে বান্দরবান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রত্যয়ন পত্রটি জাল, সেটি প্রমানিত হয়েছে। কারন সহকারী পরিচালক স্বাক্ষরটি তার নয় দাবী করেছে। সুতরাং যে এটি জাল করেছে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর স্থানীয়দের কাছ থেকে খোজ নিয়ে জানা যায়, রুবি প্রুর কাছ থেকে বান্দরবান জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালকের স্ত্রী টাকা পায়। কিন্তু রুবি প্রুর কাছে টাকা না থাকায় সে টাকা দিতে পারছিল না। তখন তার বউয়ের পরামর্শে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক তার অফিসের প্রত্যয়ন দিয়ে ব্যুরো বাংলাদেশ থেকে রুবি প্রুকে ঋণ নিয়ে দিয়ে তাদের টাকা উদ্ধার করে।
এব্যাপারে বান্দরবান জেলাপ্রশাসক দাউদুল ইসলাম বলেন, একজন সহকারী পরিচালকের নাম দিয়ে কেউ জাল সনদ ব্যবহার করলে সে কোন ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা অন্যথায় একজন সরকারী কর্মকর্তা এভাবে কাউকে প্রত্যয়ন পত্র দিতে পারেন না এটি বেআইনি। বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে বান্দরবান জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক মঞ্জুর আহমেদ বান্দরবানে কর্মরত আছেন। ২০০৭ সালে তিনি অফিস সহকারী হিসেবে বান্দরবান কার্যালয়ে যোগদান করেন পরে তিনি পদোন্নতি পেয়ে একই কার্যালয়ে সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। তার বিরুদ্ধে গণশিক্ষা কার্যক্রমে নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের অভিযোগের জনশ্রুত রয়েছে ।