খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলায় গৃহহীনদের জন্য সরকার অর্থে দুর্যোগসহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ প্রকল্পে অন্যের ঘর দেখিয়ে বিল উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির আওতায় গৃহহীনদের জন্য সরকারি অর্থে ২৫টি দুর্যোগসহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হয়। এরপরই গৃহ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, কর্মসূচির আওতায় পাতাছড়া ইউপির ডাকবাংলোপাড়া এলাকার গৃহহীন মো. তোফাজ্জেল হোসেনের দলিলকৃত জায়গায় গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগসহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ প্রকল্পে একটি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়।
কিন্তু ওই ঘরটি নির্মাণ না করেই সংশ্লিষ্ট মেম্বার অন্যের ঘর দেখিয়ে বিল উত্তোলন করে নিয়েছেন। এছাড়া ইউনিয়নের পাতাছড়া, নাকাপা, রসুলপুর, বুদুংছড়া ও পান্না কলোনিতে করা ৮-৯টি ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
গৃহহীন মো. তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, আমি জেনেছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের গৃহহীনদের সরকারি অর্থে ঘর করে দিচ্ছেন। সেই তালিকায় আমার নামও আছে। যখন দেখেছি এলাকার অন্য ঘরগুলোর কাজ শেষ হয়ে গেছে আমার ঘরটি হচ্ছে না তখন নির্মাণে দায়িত্বপ্রাপ্ত মেম্বার মহিউদ্দিনকে বললে তিনি আমাকে গালাগাল করেন।
রাতের অন্ধকারে আমার জায়গা থেকে মাটি কেটেও নিয়ে যান। এতে বাধা দিলে তিনি আমাকে মেরে ফেলার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছেন। আমি ভয়ে আর ঘরের বিষয়ে কাউকে কিছু বলতে পারিনি।
গত ২-৩ তারিখে আমি আমার জায়গাতে সরকারি ঘরের বিষয়ে মেম্বার মহিউদ্দিনের সঙ্গে আবারও কথা বললে তিনি আমাকে পাতাছড়া ইউনিয়ন পরিষদে এবং চেয়ারম্যান মনিন্দ্র ত্রিপুরার সামনে চড়-কিল-ঘুষি-লাথি মেরে পরিষদ থেকে বের করে দিয়েছেন।
আর বেশি বাড়াবাড়ি করলে সন্ত্রাসী দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। আমার ঘর তো তৈরি হয়নি বরং মেম্বার আমার জায়গা দখল করে নিয়েছে। বর্তমানে আমি খুব ভয়ে দিনযাপন করছি। আমি চেয়ারম্যানের কাছে বিচার দিয়েও বিচার পাইনি। আমি প্রশাসনের সহযোগিতা চাই এবং আমার জায়গা উদ্ধার করে ঘরটি নির্মাণ করে আমাকে বুঝিয়ে দেয়া হোক।
এ বিষয়ে মহিউদ্দিন মেম্বারের সঙ্গে কথা বললে তিনি বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান। নির্মাণ কাজ শেষ না করে কীভাবে বিল নেয়া হয়েছে- এমন প্রশ্নে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি।
পাতাছড়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, আমার জানামতে শুধু তোফাজ্জল হোসেনের ঘরটি ছাড়া সব ঘর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। তোফাজ্জল হোসনের ঘরটির নির্মাণ কাজ এখনও শেষ হয়নি। দ্রুত কাজ শেষ করে তোফাজ্জলকে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য মেম্বারকে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে রামগড় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মনছুর আলী বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো টিআর কর্মসূচির আওতায় গৃহহীদের জন্য দুর্যোগসহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ অনেক আগেই শেষ করা হয়েছে। কাজটি কেন হয়নি তা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রামগড় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) সজীব কান্তি রুদ্র বলেন, বিষয়টি আমি দায়িত্ব নেয়ার আগে হওয়ায় অবগত নই। এখন তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।